ফিলিস্তিনঃ অনিশ্চয়তার আরেক নাম

ফিলিস্তিন একটি ছোট্ট রাষ্ট্র, যার উত্তরে লেবানন, পূর্বে জর্ডান, দক্ষিণে মিশর ও সিনাই উপদ্বীপ, এবং পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর অবস্থিত। ফিলিস্তিনেই রয়েছে বাইতুল মুকাদ্দাস, যেখান থেকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মি‘রাজে গমন করেন। এই পবিত্র স্থানটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে মুসলিম উম্মাহর আবেগ, ইতিহাস ও স্মৃতি।

একসময় ফিলিস্তিন ছিল শস্য-শ্যামল, উর্বর ও সমৃদ্ধ ভূখণ্ড। ছিল উর্বর মাটি, স্বচ্ছ পানি, আর সবুজে ঘেরা পাহাড়-প্রান্তর। নানা রকম ফসলের আবাদ হতো সেখানে। দেশটি ছিল শান্তিময়; মানুষের মনে ছিল সুখ ও নিরাপত্তা। তারা রাতে শান্তিতে ঘুমাত, নিরাপদে চলাফেরা করত। ছিল সামাজিক ঐক্য, সৌহার্দ্য ও পারস্পরিক সহানুভূতি। মানুষের ছিল ঘরবাড়ি, মাঠ-ঘাট, ধর্মীয় স্থাপনা—সব মিলিয়ে এক গঠিত, সুনির্মিত সমাজ।

ফিলিস্তিনের আল-আকসা মসজিদ কেন্দ্র করে তখন নানা দেশের মানুষের আনাগোনা ছিল। শুধু মুসলিমই নয়—ইহুদি, খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরাও এখানে আসত।

কিন্তু বিপর্যয় নেমে আসে ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর।
সেই যুদ্ধে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের প্রায় ৭৮% ভূমি দখল করে নেয়। এরপর শুরু হয় দখল, উচ্ছেদ ও নির্মম হত্যাকাণ্ড। লক্ষাধিক ফিলিস্তিনিকে উচ্ছেদ করা হয় নিজভূমি থেকে। শুধু উচ্ছেদেই থেমে থাকেনি—চালানো হয় গণহত্যা; শিশু ও নারীসহ নিরীহ মানুষের ওপর নৃশংস হামলা। বহুবার আন্তর্জাতিকভাবে এসব নিন্দিত হয়েছে—যদিও তা ছিল অনেকটাই কুমিরের কান্না।

আজও সেই গণহত্যা চলছে।
যেখানে একসময় ছিল ঘরবাড়ি, সেখানে এখন শুধু ধ্বংসস্তূপ, বারুদের গন্ধ, আর চারদিকে মানুষের আর্তনাদ।
খাবার নেই, নিরাপত্তা নেই, নেই শান্তির ঘুম।

পত্রিকায় প্রায়ই আসে:
“পুষ্টিহীনতায় ভুগছে ফিলিস্তিনের শিশুরা”,
“গাজার হাসপাতালে অপুষ্টিতে মারা যাচ্ছে শিশু”—
যেখানে প্রতিদিন দখলদার ইসরায়েল হামলা চালায়।
তাদের মৃত্যু শুধু ক্ষুধায় নয়—ইসরায়েলের গুলি, বোমা ও মিসাইলে।
হাসপাতাল, স্কুল, এমনকি শরণার্থী শিবির পর্যন্ত রেহাই পায়নি ইসরায়েলি হামলা থেকে।

ফিলিস্তিনিরা আজ রাত কাটায় আতঙ্কে—বাঁচবে কি না, নিশ্চিত নয়।
শান্তি যেন এক সুদূর স্বপ্ন।

ইসরায়েল শুধু ভবন ধ্বংস করছে না; তারা ভেঙে দিচ্ছে একটি জাতির স্বপ্ন, সংস্কৃতি এবং ভবিষ্যৎ।
তবুও ফিলিস্তিনিরা লড়ে যাচ্ছে—নিজ ভূমি, মর্যাদা ও অধিকার রক্ষার জন্য।

অন্যদিকে মুসলিম বিশ্বের বহু নেতা শুধু নিন্দা জানিয়েই দায়িত্ব শেষ করছেন—যা সত্যিকারের কুমিরের কান্না ছাড়া কিছু নয়।

ফিলিস্তিনের মানুষ যখন ঘাস দিয়ে ইফতার করছে, তখন কিছু নামধারী মুসলমান বিলাসিতায় মত্ত।
অহেতুক খাবার অপচয় করছে, দাওয়াত ও ইফতারে প্লেটভর্তি খাবার ফেলে দিচ্ছে—একবারও ভাবছে না তাদের সেই ভাইবোনদের কথা, যাদের কাছে এক মুঠো রুটি যেন স্বপ্ন।

এটা শুধু অপচয় নয়—এটা দায়িত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া।
ইসলাম যেখানে বলে, “একজন মুসলমানের কষ্ট অন্য মুসলমানের কষ্ট”—
সেখানে আমাদের এই অবহেলা—চরম লজ্জাজনক।

মাঝে মাঝে পত্রিকায় রিপোর্ট আসে:
“এবার মুসলিম বিশ্ব একজোট হবে—ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে।”
কিন্তু সেই রিপোর্ট পুরোনো হওয়ার আগেই ফিলিস্তিনে নতুন করে হামলা চালায় ইসরায়েল।
পাল্টা জবাবে মুসলিমরা সীমাবদ্ধ থাকে শুধু তীব্র নিন্দা আর প্রতিবাদে

পরিশেষে, আদৌ কি কখনো মুক্তি মিলবে ফিলিস্তিনি মানুষের?
নাকি কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাবে ফিলিস্তিন দেশটি?
মানুষের মন থেকে মুছে যাবে আল-আকসা মসজিদের স্মৃতি?