ওমর (রা.)-এর বিখ্যাত চিঠি

‘ওমর (রা.)’ ছিলেন মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলিফা। তিনিই সর্বপ্রথম ‘আমিরুল মুমিনিন’ উপাধিতে ভূষিত হন। মুসলিম জাহানের এই মহান খলিফা মোট ১০ বছর ৫ মাস ২১ দিন খিলাফতের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর খিলাফতকালেই সর্বাধিক অঞ্চল মুসলমানদের শাসনের অধীনে এসেছিল, যা ছিল সেই সময় পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্য। এ কারণেই তাঁকে বলা হতো অর্ধজাহানের খলিফা। ‘ওমর (রা.)’ এর শাসনকাল। মিশর জয় করেন ‘আমর ইবনে আস (রা.)’। আর ‘আমর (রা.)’-কে মিশরের গভর্নর করা হয়। মিশরে তখন প্রবল খড়া। পানিশূণ্য মিশরের নীল নদ। আমর ‘ইবনুল আস (রা.)’ অধিবাসীদের জিজ্ঞাসা করলেন, “নীল নদের এমন অবস্থা কেন”? তারা বললেন, “হে আমির! নীল নদে বছরের একটি সময় পানি প্রবাহিত হয়, বাকি সময় নীল নদ পানি শূন্য থাকে, তবে নদীতে যুবতি কন্যা উৎসর্গ করলে দেবতার আশীর্বাদে নীল নদ আবার পানিতে ভরে উঠবে”। ‘আমর ইবনুল আস (রা.)’ এরকম নিকৃষ্ট কাজের অনুমতি দেন না (কারণ ইসলামে এ কাজের অনুমোদন দেয় না)। মিশরবাসী নিরাশ হয়ে ফিরে যায়। এভাবে তিন মাস পার হয়ে গেলেও পানি শূন্য নীল নদ। মিশরে দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ। ইসলাম শাসনামলের সূচনালগ্নে দুর্ভিক্ষ, মিশরবাসীদের বিক্ষুব্ধ করে তুলে। এমন অবস্থায় ‘আমর ইবনুল আস (রা.)’ খলিফা ‘ওমর (রা.)’-কে চিঠি লেখেন। ‘আমর ইবনুল আস (রা.)’-এর পত্র পেয়ে, খলিফা ‘ওমর (রা.)’ দুটি চিঠি লেখেন, ‘আমর ইবনুল আস (রা.)’-এর প্রতি, “সেখানে এই আমানবিক কাজের অনুমতি না দেওয়ার কারণে ‘আমর ইবনুল আস (রা.)’-এর প্রশংসা করেন ‘ওমর (রা.)’। অতঃপর তিনি ২য় যে চিঠিটি তোমাকে দেওয়া হয়েছে, সেটি কাউকে দিয়ে শুকনো নীল নদের মাঝে নিক্ষেপ করবে। আর নিক্ষেপকারী ব্যক্তিকে বলে দেবে সে যাতে চিঠি নিক্ষেপ করেই তীরে ফিরে আসে”। ‘আমর ইবনুল আস (রা.)’ চিঠি হাতে পেয়েই একজন অশ্বারোহী সেনাকে দিয়ে নীল নদে চিঠি পাঠিয়ে দেন। পরদিনই ঘটে এর বিস্ময়কর ঘটনা। জেগে উঠে নীল নদ। ‘আল্লাহ তায়ালা’ এক রাতে নীল নদের পানিকে ১৬ গজ উচ্চতায় প্রবাহিত করে দিয়েছেন। চকচকে ঝকঝকে পানিতে ভরে উঠে নীল নদ। সেই থেকে আজ পর্যন্ত শুকায়নি নীল নদ। এক মিনিটের জন্যও।

এখন সবার মনে একটি প্রশ্ন আসতে পারে, কি ছিল ‘ওমর (রা.)’-এর সেই বিখ্যাত চিঠিতে? ‘ওমর (রা.)’ সেই চিঠিতে নীল নদের উদ্দেশে লিখেছিলেন, “আল্লাহর বান্দা আমীরুল মুমিনীন ‘ওমরের’ পক্ষ থেকে মিশরের নীল নদের প্রতি প্রেরিত এই পত্র। হে নীল নদ! তুমি যদি নিজের ক্ষমতা বলে ও নিজের পক্ষ থেকে প্রবাহিত হয়ে থাক, তাহলে তুমি আজ থেকে আর প্রবাহিত হওয়া থেমে বিরত থাক। তোমার কাছে আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই। আর তুমি যদি মহা পরাক্রমশালী এক ‘আল্লাহ’র নির্দেশে প্রবাহিত হয়ে থাক, তাহলে আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন তোমাকে প্রবাহিত করেন”।