খোলাফায়ে রাশেদীন ও চার খলিফার শাসন আমল (পর্ব-৩)

হযরত উসমান (রা.)

হযরত উমর (রা.)-কে দাফন করার পর শূরা সদস্যরা মদিনায় একত্রিত হন। কে হবেন পরবর্তী খলিফা। এ বিয়ষয়টি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা ও তুমুল বাক-বিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে কয়েকজন সদস্য খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন। শেষ পর্যন্ত হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা.) জনমত যাচাইয়ের দায়িত্ব নেন। তিনি তিন দিন ধরে মদিনার জনগণের মতামত সংগ্রহ করেন এবং বুঝতে পারেন যে অধিকাংশ মানুষ হযরত উসমান (রা.)-কে খলিফা হিসেবে দেখতে চান।

যেদিন সকালে উমর (রা.)-নির্ধারিত সময় সীমা শেষ হয়, সেদিন সকালে মসজিদে নববী লোকে পরিপূর্ণ। শেষ সিদ্ধান্তটি শোনার জন্য সবাই ব্যাকুল। ফজরের নামাযের পর সমবেত মদীনাবাসীদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত এক ভাষণের পর আবদুর রাহমান খলীফা হিসেবে হযরত উসমান (রা.)-এর নামটি ঘোষণা করেন এবং তাঁর হাতে বাইয়াত করেন। তারপরই হযরত আলী (রা.)-ও বাইয়াত নেন। অতঃপর সমবেত জনমণ্ডলী হযরত উসমান (রা.)-এর হাতে বাইয়াত করেন। হিজরী ২৪ সনের ১লা মুহাররম সোমবার সকালে তিনি খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

তাঁর শাসনামলে মুসলিম সাম্রাজ্য ব্যাপক প্রসার লাভ করে। সামরিক বিজয়, প্রশাসনিক উন্নয়ন এবং ইসলাম প্রচারের মাধ্যমে তিনি ইসলামের ভিত্তিকে আরও মজবুত করেন। তাঁর আমলে অসংখ্য যুদ্ধ হয়। এর মধ্যে সাইপ্রাস যুদ্ধ, আজারবাইজান যুদ্ধ,খোরাসান অভিযান,তাবরিস্তান যুদ্ধ ইত্যাদি যুদ্ধ উল্লেখ্যযোগ্য। তাঁর আমলে সম্পূর্ন কোরআনকে ৩০পারায় ভাগ করা হয়

হযরত উসমান (রা.) প্রথম দিকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে খিলাফতের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। খিলাফতের প্রথম পর্যায়ে তাঁর বিরুদ্ধে তেমন অভিযোগ শোনা যায়না। তবে শেষের দিকে বসরা, কুফা, মিসর প্রভৃতি অঞ্চল থেকে তাঁর বিরুদ্ধে অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠতে থাকে। মূলত এ অসন্তোষ সৃষ্টির পশ্চাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে পরাজিত ইয়াহুদী ও মুনাফিক শক্তি। ধীরে ধীরে তারা সংঘবদ্ধভাবে বিদ্রোহী হয়ে উঠে এবং খলিফার পদত্যাগ চায়। কিন্তু হজরত উসমান (রা.) সব ধরনের সহিংসতা এড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, আল্লাহ তাঁর কাছে খেলাফতের দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি নিজের হাতে তা ত্যাগ করবেন না। বিদ্রোহীরা তাঁর বাড়ি ঘিরে ফেলে এবং চল্লিশ দিন পর্যন্ত তিনি গৃহবন্দি থাকেন। এমনকি তাঁর পানি ও খাবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। সাহাবিরা তাঁর পাশে এসে অস্ত্র ধারণ করে যুদ্ধ করতে চাইলে তিনি তা নিষেধ করেন, কারণ তিনি কোনো রকম রক্তপাত চাননি। এই সময় তিনি অধিকাংশ সময় কুরআন তিলাওয়াতে কাটাতেন।

অবশেষে, ৩৫ হিজরির ১৮ যুলহজ্জ (৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দ), শুক্রবার, কিছু বিদ্রোহী তাঁর ঘরে প্রবেশ করে যখন তিনি কুরআন তেলাওয়াত করছিলেন। কুরআন তেলাওয়াতের অবস্থাতেই এক বিদ্রোহী তাঁর ওপর আঘাত করে এবং তিনি শাহাদত বরণ করেন। রক্ত ঝরে পড়ে কুরআনের পাতায় যেন তাঁর শাহাদতের সাক্ষর হয়ে থাকে সেই মহাগ্রন্থেই। এ ঘটনা সংঘটিত হয় রাসূলের (সা.) ওফাতের ২৫ বছর পর। তাঁর খেলাফতকাল ছিল ১১ বছর ৭ মাস ১৪ দিন। আর তাঁর শাহাদাতের মধ্যদিয়েই ভাঙ্গতে শুরু করে, সাহাবিদের রক্ত দিয়ে গড়া খেলাফায়ে রাশেদিন।

চলবে……..