আশারায় মুবাশশারাঃ সেই ১০ সৌভাগ্যবান সাহাবীর জীবনী (পর্ব-৬)

হযরত আলি রা.
নাম-পরিচয়
নাম, আলি। উপাধি আসাদুল্লাহ, হায়দার ও মুরতাযা। ডাকনাম আবুল হাসান ও আবু তুরাব । পিতা, আবু তালিব ও মাতা ফাতিমা বিনতে আসাদ ।

জন্ম ও বংশপরিচয়
হযরত আলি রা. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত- প্রাপ্তির দশ বছর পূর্বে মক্কার সুবিখ্যাত কোরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন । তার মাতা ফাতিমা বিনতে আসাদ কাবাঘর তাওয়াফ করছিলেন। এমন সময় প্রসববেদনা আরম্ভ হয়। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি কাবাঘরে ঢুকে পড়লেন এবং সেখানেই হযরত আলি রা. জন্মগ্রহণ করেন। কাবাঘরে জন্মলাভ করার সৌভাগ্য একমাত্র হযরত আলিই অর্জন করেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্বপুরুষ অল্প কয়েকজন বুযুর্গ এমন ছিলেন, যারা মাতা-পিতা উভয়ের দিক দিয়ে হাশেমি বংশধর, তাদের মধ্যে হযরত আলি রা. এর স্থান সবার আগে ।

শৈশবকাল
মুসলিম শরিফ, সিরাতে ইবনে হিশাম প্রভৃতি কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, হযরত আলি রা. এর বয়স যখন ৫ বছর তখন মক্কায় চরম খাদ্যসঙ্কট দেখা দেয়। আবু তালিব প্রতাপশালী হলেও অর্থশালী ছিলেন না। তার পরিবার- পরিজনের সদস্য সংখ্যা ছিল খুব বেশি। প্রত্যেকের লালন-পালনের দায়িত্ব ছিল একমাত্র তার উপর। তাই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলি রা. কে নিজের দায়িত্বে নিয়ে নেন এবং শেষ পর্যন্ত আলি রা. এর লালন-পালনের দায়িত্বভার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতেই রয়ে যায়।

ইসলামগ্রহণ

হযরত আলির বয়স যখন নয় থেকে এগারো বছরের মধ্যে তখন একদিন তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও হযরত খাদিজা রা. কে সিজদাবনত দেখতে পেলেন। তিনি এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন। তারা বললেন, আমরা এক আল্লাহর ইবাদত করছি। তখন তিনি বিনাদ্বিধায় ইসলামগ্রহণ করেন। বর্ণিত আছে, হযরত খাদিজা রা. এর পর হযরত আলি রা. সর্বপ্রথম ইসলামগ্রহণ করেন। অল্পবয়সী বালকদের মধ্যেও তিনি প্রথম ইসলামগ্রহণকারী।

হিজরত

কোরাইশরা যখন মুসলমানদের উপর সবধরনের নির্যাতন শুরু করল তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে মদিনায় হিজরত করার পরামর্শ দিলেন। সাহাবাগণ কোরাইশদের দৃষ্টি এড়িয়ে একজন দুজন করে মক্কা হতে মদিনায় হিজরত করতে শুরু করলেন । শেষ পর্যায়ে কেবল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, হযরত আবু বকর রা., হযরত আলি রা. এবং কয়েকজন অক্ষম ব্যক্তি ছাড়া কেউ অবশিষ্ট থাকলেন না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্রুত নিজের উপর অর্পিত আমানতসহ খুটিনাটি যাবতীয় কাজ সেরে আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষায় রইলেন। কোরাইশকুল দারুন নদওয়ায় পরামর্শ করে রাসুলকে হত্যা করার সিদ্ধান্তে অঙ্গীকারাবদ্ধ হল। বিশিষ্ট চোদ্দ গোত্রের চোদ্দজন বীর যুবক সেই অন্ধকার রাতে চোদ্দটি নাঙ্গা তলোয়ার নিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে রইল। সিদ্ধান্ত ছিল ফজরের নামাযের জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বের হবেন তখন সাথে সাথেই চোদ্দটি তরবারি একসাথে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর ঝাপিয়ে পড়বে। ইতিপূর্বে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিরাপত্তার জন্য দু’পাশে দু’জন থাকতেন। বাইরে ছিলেন চাচা আবু তালিব। ঘরে ছিলেন বিবি খাদিজা। আজ সেই স্থানে বাইরে হযরত আবু বকর এবং ঘরে হযরত আলি । এখানেই বুঝা যাচ্ছে এ দু’জনের গুরুত্ব ও মহত্ব কত বেশি। তারা মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছেন। বিশেষ করে আলি রা. কে রেখে যান চৌদ্দটি আরবীয় নেকড়ের মুখে। আজ আর কেউ নেই। সমগ্র আরব ও কোরাইশ একদিকে এবং অন্যদিকে একাকী নির্ভীক আলি। হিজরত প্রসঙ্গে হযরত আলি রা. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় রওনা হওয়ার পূর্বে আমাকে মক্কায় থেকে লোকজনের যেসব আমানত তার কাছে ছিল তা ফেরত দেওয়ার কথা বললেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলিকে হুকুম করলেন, আমার বিছানায় রাত্র যাপন কর। হযরত আলি রা. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশমত যে চাদরটি মুড়ি দিয়ে রাসুল শুতেন হযরত আলি তা মুড়ি দিয়ে শুয়ে রাত্রি যাপন করলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনতে পেলেন আল্লাহর নির্দেশ, আমি ওদের সামনে ও পিছনে অন্তরাল স্থাপন করেছি এবং ওদের দৃষ্টির উপর আবরণ রেখেছি, ফলে ওরা দেখতে পাবে না ।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চললেন মদিনার পথে। হযরত আলি রা. এর সারা রাত কেটে যায় রাসুলের বিছানায় । পাহারাদাররা রাত কাটায় পাহারা দিয়ে। ভোরের আলোয় আলি রা. কে বের হতে দেখে সবাই অবাক! মুহাম্মদ কোথায় এই প্রশ্নের জবাবে হযরত আলি বললেন, তোমরা সারা রাত দরজায় ছিলে, আর আমি ছিলাম ঘুমে। আমি জানি না কোথায় তিনি। চোদ্দজন যুবক হতবাক। সকলেই বিস্মিত। সারা মক্কায় খবর ছড়ায় মুহাম্মদ নেই। সমগ্র কোরাইশ বাহিনী বিদ্যুৎ গতিতে ছোটাছুটি করতে থাকে। এদিকে হযরত আলি রা. তিনদিন পর্যন্ত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশমত আপন কাজ সমাধা করে একাকী মদিনার পথে পাড়ি দিলেন। প্রায় এগার দিন পর হযরত আলি তিনশ মাইল পথ অতিক্রম করে মদিনার নিকটবর্তী কুবাপল্লীতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে হাজির হলেন। সেদিন হযরত আলিকে দেখে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বাগত জানান। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রেখে যাওয়া আমানত পৌছানোসহ বিভিন্ন দায়িত্ব তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে আনজাম দেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সেদিন কি পরিমাণ আনন্দ পেয়েছিলেন তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসমাপ্ত কাজ, সামাজিক দায়-দায়িত্ব আলি রা. কোন কোন পরিবেশ পরিস্থিতিতে সমাধা করলেন তা চিন্তা করলে মন অস্থির হয়ে ওঠে। এ মহান দায়িত্ব পালনে রাসুল সা. যাকে রেখে গিয়েছিলেন, নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে রাসুলের দায়িত্ব পালন করেছিলেন যিনি, তিনিই আলি ইবনে আবু তালিব ।

মসজিদ প্রতিষ্ঠায় হযরত আলি রা. এর অবদান

শত্রুমুক্ত হয়ে জামাতে নামায পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। সারা পৃথিবীতে কুবাপল্লীই সর্বপ্রথম ইসলামের মসজিদ বুকে ধারণ করার গৌরব অর্জন করে। এ মসজিদ নির্মাণের প্রধান দায়িত্ব অর্পিত হয় হযরত আলি রা. এর উপর। মসজিদের কাজ সম্পন্ন করতে তার সাত দিন সময় লাগে । তাই ইসলামের প্রথম মসজিদ প্রতিষ্ঠায় হযরত আলি রা. এর অবদান ইতিহাসের পাতায় সোনার হরফে লেখা থাকবে ।

বিবাহ

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিবাহ-যোগ্য কন্যা হযরত ফাতিমার জন্য চারদিক হতে প্রস্তাব আসতে থাকে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একই জবাব, আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভর কর। একদিন হযরত আবু বকর, ওমর ও সায়িদ রা. একত্রে আলোচনায় সিদ্ধান্ত নেন যে, ফাতিমা রা. এর বিয়েটা হযরত আলির সাথে হওয়াই সমুচিত হবে। হযরত আলি রা. এর নিকট এ প্রস্তাব পেশ করা হলে তিনি তার আর্থিক অসচ্ছলতার কথা ব্যক্ত করেন। একপর্যায়ে সাহাবাদের কথামত হযরত আলি রা. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে বিয়ের প্রস্তাব পেশ করেন। এতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দারুণ আনন্দিত হন। তারপর তিনি কন্যা ফাতিমাকে এ বিবাহের মতামত জিজ্ঞাসা করলে তিনি সানন্দে গ্রহণ করেন। দ্বিতীয় হিজরি সনে হযরত ফাতিমা রা. কে হযরত আলি রা. এর সাথে বিবাহ দেওয়া হয়। তখন হযরত আলি রা এর বয়স ছিল চব্বিশ বছর। বিয়ের সময় হযরত আলি রা. কে ডেকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে চাইলেন, মোহরানা আদায় করার মত তোমার কাছে কিছু আছে কি না। তিনি বলেন, একটি বর্ম ও একটি ঘোড়া রয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঘোড়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তাই বর্মটি বিক্রি করে খরচ সংগ্রহ কর । তিনি সেটি ৪৮০ দিরহামে বিক্রি করে সমুদয় অর্থ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমতে পেশ করেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত বিলাল রা. কে দিয়ে সুগন্ধি আনিয়ে বিয়ে পড়িয়ে দেন। তারপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি আল্লাহর নির্দেশেই আলির সাথে ফাতিমার বিবাহ সম্পন্ন করেছি।”

হযরত আবু সায়িদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি যাদেরকে বিবাহ করেছি এবং আমার মেয়েদের বিবাহ যাদের সাথে দিয়েছি সব আল্লাহর নির্দেশেই করেছি। তারপর নবদম্পতির শান্তি-সুখের জন্য আল্লাহর কাছে সকলকে নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত মোনাজাত করেন। মোনাজাত শেষে উপস্থিত সকলের মধ্যে কিছু খেজুর ছিটিয়ে দেন। বিয়ের পূর্বে হযরত আলি রা. এর কোনো বাড়িঘর ছিল না। হযরত ফাতিমাকে নিয়ে বসবাস করার জন্য যখন বাড়ির প্রশ্ন দেখা দেয় তখন হযরত হারেস ইবনে নোমান রা. তাদের বসবাসের জন্য একটি বাড়ি দিয়ে দেন। হযরত আলি রা. সন্ত্রিক সে বাড়িতে বসবাস করতে থাকেন।

পারিবারিক অবস্থা

খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতিমা রা. এর ইনতেকালের পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে হযরত আলি রা. আরো কয়েকটি বিবাহ করেছিলেন।

হযরত আলি রা. এর পুত্রসন্তানগণ ছিলেন, হযরত ইমাম হাসান রা., ইমাম হুসাইন রা., হযরত মুহসিন রা., হযরত জাফর রা., হযরত আব্বাস রা., হযরত আবদুল্লাহ রা., হযরত ওবায়দুল্লাহ., হযরত আবু বকর রা., হযরত আসগর রহ. হযরত ইয়াহয়া রা.।

আর কন্যাসন্তান হলেন, হযরত রোকাইয়া রা., হযরত উম্মে কুলসুম রা., হযরত যয়নব রা., হযরত উম্মুল হাসান রা., হযরত রোমালা রা.

জিহাদে অংশগ্রহণ

মুসলমানদের প্রথম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বদরের যুদ্ধ। সে যুদ্ধে হযরত আলি রা. অসাধারণ সাহসিকতার পরিচয় দেন। বলা চলে তার বীরত্ব ও সাহসিকতার কারণে অল্পসংখ্যক মুসলমান বিশাল সুদক্ষ কাফেরবাহিনীকে পরাজিত করে। আরবদের সে সময়ের প্রথা অনুসারে কোরাইশদের দল হতে ওতবা, শায়বা ও অলিদ নামক তিন বীর যুদ্ধ-ক্ষেত্রে এগিয়ে এসে মুসলিমপক্ষকে সম্মুখযুদ্ধের আহ্বান জানায়। এই পক্ষ থেকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশে তিন বীর এগিয়ে গেল । তাদের দেখে ঐ পক্ষের ওতবা জিজ্ঞাসা করল, তোমরা কে হে? তোমাদেরকে তো কখনো মক্কায় দেখিনি? উত্তরে তারা বললেন, আমরা মদিনাবাসী আনসার । তখন ওতবা কিছুটা তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলল, তোমরা কেন? তোমাদের সঙ্গে তো আমাদের কোনো বিবাদ নেই। আমাদের যেসব গৃহশত্রু পালিয়ে এসে এখানে আশ্রয় নিয়েছে আমরা শুধু একবার তাদের দেখে নিতে চাই । তারপর সে চিৎকার দিয়ে বলতে শুরু করল, হে মুহাম্মদ, সাহস থাকে তো নিজে যুদ্ধ ক্ষেত্রে নেমে এসো, না হয় কোরাইশদের কাউকে পাঠাও। এবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশে মুসলিমপক্ষ থেকে বীরবর হামযা, ওবায়দা আর শেরেখোদা হযরত আলি রা. রণক্ষেত্রে হাজির হলেন। শুরু হল মুখোমুখি যুদ্ধ। কিছুক্ষণ পরেই হযরত আলি রা. এর হাতে অলিদ, হযরত হামযা রা. এর হাতে ওতবা নিহত হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হযরত ওবায়দা রা. শায়বার হাতে আক্রান্ত হন। এ দৃশ্য দেখে বিজয়ী হযরত আলি রা. হায়দারি হাঁক হেঁকে ঝাপিয়ে পড়লেন শায়বার উপর । ফের শুরু হলো দু’জনের মধ্যে ভীষণ মল্লযুদ্ধ। অল্পক্ষণের মধ্যে শায়বা পরাজিত ও নিহত হল। আর হযরত আলি রা. ওবায়দা রা. কে আহত অবস্থায় কাঁধে তুলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে নিয়ে গেলেন। কোরাইশ-দলপতি আবু জাহল এবার তার বিরাট বাহিনী নিয়ে একযোগে আক্রমণ করে বসল ক্ষুদ্র মুসলিমবাহিনীর উপর। দেখতে দেখতে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। হযরত আলি রা. এর জীবনের এই প্রথম যুদ্ধে তার সুবিখ্যাত জুলফিকার নামক তরবারিখানা হাতে অসাধারণ বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। ইসলামের ইতিহাসে তা স্মরণীয় হয়ে আছে। তিনশ তেরজনের একটি ক্ষুদ্র বাহিনী যে এক হাজার সুসজ্জিত ও সুদক্ষ বাহিনীকে এমনভাবে পরাজিত ও পর্যুদস্ত করে দিতে পেরেছিল, এর পেছনে হযরত আলির বীরত্বপূর্ণ অবদান ছিল অনেক বেশি। এই যুদ্ধের ফলে মুসলমানদের সাহস ও নৈতিক বল বেড়ে যায় বহু গুণে ৷ বদরযুদ্ধে যে সকল সাহাবা অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের উপর আল্লাহ তায়ালা খুশি হয়ে ইরশাদ করেন, আজকের পর তোমরা যা খুশি কর । তোমাদের সমস্ত অন্যায় ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। যদি তোমাদের থেকে কোনো অপরাধ হয়েও যায় তা নেক দ্বারা পরিবর্তন করে দেওয়া হবে।