আশারায় মুবাশশারাঃসেই ১০ সৌভাগ্যবান সাহাবী সাহাবীর জীবনী (পর্ব-৪)

হযরত ওসমান রা.

নাম ও বংশপরিচয়
নাম ওসমান। পিতার নাম আফফান। ডাকনাম আবু আবদুল্লাহ। কেউ কেউ বলেন, আবু আমর তার ডাকনাম। উপাধি হলো জুন্নুরাইন। তার মাতা আরওয়া বিনতে কুরাইজ। তিনি কুরাইশ বংশের উমাইয়া শাখার সন্তান। তার ঊর্ধ্বতন পুরুষ আবদে মানাফে গিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশ তালিকার সাথে মিলিত হয়েছে। তার নানি রায়দা বিনতে আবদুল মুত্তালিব রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফুফু। এভাবে মাতাপিতা উভয়ের বংশ রাসুলের বংশের সাথে মিলিত হয়েছে।
আরবে তখন দুটি গোত্রের প্রসিদ্ধি এবং প্রভাব ছিল। ধর্মীয় দিক দিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশ বনু হাশিম। আর এ দিকেই মানুষ ঝোঁকত বেশি। অপরদিকে ওসমান রা. এর বংশ বনু উমাইয়া ছিল আর্থিক দিক দিয়ে প্রতিপত্তিশালী। তার বংশের উমাইয়া বিন আবদে শামস অত্যন্ত প্রসিদ্ধ ছিল। তার নামেই তাদেরকে বনু উমাইয়া বলে ডাকা হত ।

ইসলামগ্রহণ
হযরত ওসমান রা. শিক্ষাগ্রহণের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য করতে থাকেন এবং এতে অত্যন্ত লাভবান হন। ফলে তার সুখ্যাতি সারা আরবে ছড়িয়ে পড়ে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াতপ্রাপ্তির সময় তাঁর বয়স ছিল ৩৪ বছর। হযরত আবু বকর রা. ইসলাম গ্রহণ করার পর তিনিও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে লোকজনকে ইসলামের প্রতি দাওয়াত দিতে থাকেন। হযরত আবু বকর রা. ছিলেন বংশগতভাবে সম্ভ্রান্ত, ভদ্র ও জ্ঞানী। লোকজন তাঁর কাছে আসা-যাওয়া করত। তাই তাঁর হাতে যুবায়ের ইবনুল আওয়াম, তালহা ইবনে ওবায়দুল্লাহ এবং ওসমান রা.-সহ অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করলেন । হযরত আবু বকর রা. ওসমান রা. কে ইসলামের দাওয়াত দিলে তাঁর মন ইসলামের প্রতি ঝুকে পড়ে। এরই মধ্যে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে এসে গভীর সহানুভূতির দৃষ্টিতে তাকান এবং বলেন, ওসমান, আমি মানবজাতির হেদায়েতের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে রাসুল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। তুমি কি আল্লাহর বেহেশত কবুল করবে না? তাঁর মন আগেই প্রস্তুত ছিল। তাই তিনি সাথে সাথে ইসলাম কবুল করলেন। তিনি বলেন, আমি সেই চারজনের চতুর্থজন, যারা প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছিল। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি বংশীয় গৌরব উপেক্ষা করে ইসলাম কবুল করেন।
তাঁর ইসলাম কবুল করার সংবাদ গোটা উমাইয়া বংশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। তাঁর বংশের দুই প্রভাবশালী আকাবা ও আবু সুফিয়ানের ক্ষোভের সীমা রইল না। তারা হযরত ওসমান রা. এর চাচা আকাবা ইবনে আসের কাছে হযরত ওসমানের বিরুদ্ধে নালিশ করল। তারপর তারা তাঁকে রশি দিয়ে শক্ত করে বেধে ঘরে আটকে রাখল। আর তাকে সীমাহীন কষ্ট দিতে লাগল । এমনকি খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দিল। ছালা পুড়িয়ে ধোঁয়া তাঁর নাকে ঢুকিয়ে দেওয়ার মত অমানবিক নির্যাতন করত । কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না । তিনি ছিলেন ইসলামের উপর অটল, অবিচল। একসময় নিরুপায় হয়ে তারা তাঁকে আপন পথে ছেড়ে দিল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এই অবিচলতায় অত্যন্ত খুশি হলেন এবং মেয়ে রুকাইয়াকে তাঁর সাথে বিবাহ দিলেন। হযরত রুকাইয়া দ্বিতীয় হিজরিতে মদিনায় ইনতেকাল করলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দ্বিতীয় কন্যা উম্মে কুলসুমকেও তাঁর সাথে বিবাহ দেন। এ জন্য তাঁকে জুন্নুরাইন বলা হয়। এই স্ত্রীও ইনতেকাল করলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার তৃতীয় কন্যা থাকলে তাকেও ওসমানের সাথে বিবাহ দিতাম।

হিজরত
নবুওয়াতের পঞ্চম বছর মুশরিকদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে যারা হাবাশায় হিজরত করেছিলেন হযরত ওসমান রা. তাদের একজন। তিনি তার স্ত্রী, নবী-কন্যা রুকাইয়া রা. কে সঙ্গে নিয়ে হিজরত করেন। হযরত লুত আ. এর পর তিনিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি, যিনি সপরিবারে হিজরত করেন। তাঁর হিজরতের পর বহুদিন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কোনো খবর না পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। পরবর্তী সময়ে হাবাশা থেকে এক কুরাইশ মহিলা এলে তাকে সংবাদ জিজ্ঞেস করলেন। সে বলল, ‘ দেখেছি রুকাইয়া গাধার পিঠে আর ওসমান তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এ সংবাদ শুনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য দোয়া করলেন। সেখানে তাদের একটি সন্তান, আবদুল্লাহ হয়েছিল। ফলে তিনি আবু আবদুল্লাহ উপাধি লাভ করেন। চতুর্থ হিজরি সনে এই ছেলে ইনতেকাল করে।
আমি হাবাশায় থাকাকালে কেউ গুজব ছড়ালো যে, মক্কার সবাই ইসলাম গ্রহণ করেছে। তখন হযরত ওসমান রা.-সহ অনেকেই মক্কায় ফিরে এলেন। খবরটা মিথ্যা ছিল । হাবাশা থেকে তাদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্য কেউ এই গুজব রটিয়েছিল। ফলে কিছু সংখ্যক সাহাবা পুনরায় হাবাশায় চলে যান। কিন্তু হযরত ওসমান রা. মক্কায় থেকে যান এবং পরবর্তী সময়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মদিনায় হিজরত করেন। তিনি অত্যধিক ধনী হওয়ার দরুন ‘গনি’ উপাধি লাভ করেছিলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার মুহাজির ও আনসারদের মাঝে ভ্রাতৃ-বন্ধন স্থাপন করার সময় হযরত আউফ ইবনে সাবেত রা. এর সাথে হযরত ওসমান রা. এর ভ্রাতৃত্ব গড়ে দেন। হযরত আউফ ছিলেন মুসলিম কবি হযরত হাসসান ইবনে সাবেত রা. এর ভাই। তাই হযরত হাসসান রা. হযরত ওসমান রা কে অত্যন্ত ভালবাসতেন। তাঁর শাহাদাতের পর তিনি খুব কেঁদেছিলেন।

জিহাদে অংশগ্রহণ
হযরত ওসমান রা. অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন। তবে এ কোমলতা ছিল নিজেদের পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে। হিজরতের পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যতগুলো জিহাদ করেছেন তিনি সব কটিতেই সোৎসাহে অংশগ্রহণ করেেেছন। তবে বদরযুদ্ধে সশরীরে অংশগ্রহণ করতে পারেন নি। কেননা সেনাপতি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মদিনায় অবস্থান করে অসুস্থ রুকাইয়া রা. এর দেখভাল করার জন্য নির্দেশ দেন। বদরযুদ্ধে জয়লাভ করে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় ফিরে আসার পূর্বেই হযরত রুকাইয়া ইনতেকাল করেন। তিনি এসে দেখেন তার দাফন-কাফনের ব্যবস্থায় লোকজন ব্যস্ত আছে। ওসমান রা. এর মত আরো সাতজন সাহাবি বদরযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। কিন্তু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের সকলকে বদরী সাহাবাদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং তাঁদেরকে গনিমতের অংশও দিয়েছেন। কারণ তারা প্রত্যেকেই যুদ্ধের কাজেই বিভিন্ন স্থানে গিয়েছিলেন। কেউবা মদিনার অস্থায়ী শাসক, কেউবা সংবাদবাহক । ইত্যাদি ।
হযরত ওসমান রা. দুই কারণে সীমাহীন দুঃখে নিমজ্জিত হলেন। এক. ইসলামের প্রথম জিহাদে অংশগ্রহণ করতে না পারা। দুই. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আত্মীয়তা-সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে পড়া। হযরত ওমর রা. তাকে এমন দুঃখিত দেখে বললেন, ‘আপনার ধৈর্য ধরা উচিত। যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।’ তিনি বললেন, ‘আমার দুঃখ রাসুলের সাথে আমার আত্মীয়তা-সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেল।’ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এমন দুঃখ দেখে তাঁর অপর কন্যা উম্মে কুলসুম রা.-কে ও তাঁর সাথে বিবাহ দেন ৷
অহুদযুদ্ধে মুজাহিদদের ছত্রভঙ্গের সময় যেকজন সাহাবা রাসুলের সঙ্গে থেকে দৃঢ়তার সাথে লড়াই করেছেন হযরত ওসমান রা. তাদের অন্যতম । চতুর্থ হিজরি সনে যাতুর রিকা যুদ্ধে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় তাকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত নিযুক্ত করে যান।

খন্দক যুদ্ধের পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওমরার উদ্দেশ্যে মক্কায় রওয়ানা হলে হযরত ওসমান রা. তাঁর সাথে ছিলেন। হুদায়বিয়ার যেই ঐতিহাসিক বিজয়-সন্ধি কাফেরদের সাথে হয়েছিল হযরত ওসমান রা. ছিলেন তার কেন্দ্রবিন্দু। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওমরার উদ্দেশ্যে হুদায়বিয়া নামক স্থানে পৌছে জানতে পারলেন যে, মুশরিকরা তাঁকে এ বছর ওমরা করতে দিবে না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধ করতে আসেননি বিধায় মক্কাবাসীকে বুঝানোর জন্য হযরত ওসমান রা. কে তাদের কাছে পাঠালেন। তিনি মক্কায় গিয়ে তাদেরকে অনেক বুঝালেন কিন্তু তারা তাকে উল্টো বন্দি করে ফেলল এবং পরবর্তী সময়ে তাকে ছেড়ে দিয়ে বলল, তুমি তাওয়াফ করে চলে যাও। তিনি বললেন, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ছাড়া আমি কিছুতেই তাওয়াফ করব না।’ মক্কাবাসীরা তাঁকে তিনদিন আটকে রাখল কিন্তু হত্যা করার সাহস পেল না। ওসমান রা. এর ফিরে আসতে দেরি দেখে মুসলমানরা ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। আর এ দিকে গুজব ছড়িয়ে পড়লো- ওসমান নিহত হয়েছে। তাই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেদিন বাবলা গাছের নিচে চোদ্দশ সাহাবার হাতে এই মর্মে বাইয়াত নিলেন যে, তারা ওসমান-হত্যার প্রতিশোধ নিবেন; যা ইতিহাসে ‘বাইয়াতুর রিদওয়ান’ নামে খ্যাত। বাইয়াতের সময় হযরত ওসমান রা. না থাকায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের এক হাত অন্য হাতের উপর রেখে বাইয়াত নিলেন এবং বললেন, এটা ওসমানের হাত । তারপর মক্কাবাসীদের সাথে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সন্ধি করেন সেটাই ইতিহাসে হুদায়বিয়ার সন্ধি নামে খ্যাত। এরপর যত যুদ্ধ হয়েছে সব কটির মধ্যেই হযরত ওসমান রা. সশরীরে এবং জানমাল দিয়ে সক্রিয়ভাবে শরিক থেকেছেন।

স্বভাব-চরিত্র

হযরত ওসমান রা. জন্মগতভাবেই লজ্জাশীল এবং চরিত্রবান ছিলেন। জাহেলি যুগে মানুষ মদপান, জুয়া খেলা, ব্যাভিচার, লুটতরাজসহ যেসমস্ত অপকর্ম করত, তিনি এগুলোকে ঘৃণা করতেন। তিনি ছিলেন সম্ভ্রান্ত। তাই তিনি দ্বিধাহীনভাবেই ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তাঁর লজ্জা ও নম্রতা এত বেশি ছিল যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ওসমানকে দেখে ফেরেশতারাও লজ্জা পায়। তিনি ছিলেন সত্য পরামর্শদাতা, উত্তম উপদেশদাতা এবং নেক কাজ করার ব্যাপারে অপরিসীম আগ্রহী।

দানখয়রাত তাঁর স্বভাবে পরিণত হয়েছিল। বিভিন্ন যুদ্ধে তিনি প্রচুর অর্থ দান করেছেন। শুধু তাবুক যুদ্ধেই তিনি দান করেছেন সাড়ে নয়শ উট, পঞ্চাশটি ঘোড়া। ইবনে ইসহাক বলেন, তাবুক যুদ্ধে হযরত ওসমান রা. এত বেশি অর্থ দান করেছিলেন যে, তাঁর সমপরিমাণ কেউ দিতে পারেনি। তাবুক যুদ্ধের এক-তৃতীয়াংশ সৈন্যের দায়িত্বভার তিনি তার কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। ফলে তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্তুষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সামনের পিছনের সব গুনাহ মাফের জন্য দোয়া করেছেন। তিনি বলেন, আজ থেকে ওসমান যা কিছু করবে কোনো কিছুই তার জন্য ক্ষতিকর হবে না ।

হযরত আবু বকর রা. এর যুগে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ঐ সময় হযরত ওসমান রা. এর এক হাজার উট বিদেশ হতে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে মদিনায় পৌঁছলে অনাহারক্লিষ্ট মানুষেরা তা চড়া মূল্যে ক্রয় করতে চাইল। তিনি বিক্রি না করে এক হাজার উটের সমুদয় খাবার মানুষের জন্য ওয়াক্ফ করে দিলেন।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে পানির বড় অভাব ছিল। এক ইহুদির কূপ ছাড়া আর কারোরই কূপ ছিল না। তখন ওসমান রা. বেশ কিছু কূপ চড়া মূল্যে ক্রয় করে মুসলমানদের জন্য ওয়াক্ফ করে দেন।

এক যুদ্ধে মুসলমানদের খাদ্যের অভাব হলে তিনি চোদ্দটি উট বোঝাই খাবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাদিয়া দিয়ে বললেন, মুসলমানদের মাঝে এগুলো বণ্টন করে দিন।

অগাধ ধনসম্পত্তির মালিক হওয়া সত্ত্বেও তিনি কোনোদিন এই ভাব দেখাননি যে, তিনি ধনবান। অত্যন্ত সাদাসিধেভাবে তিনি চলাফেরা করতেন। কথাবার্তা, খাওয়াদাওয়ায় সবসময় ছিলেন সাধারণ থেকে আরো সাধারণ। খলিফা হওয়ার পরও তিনি মসজিদে নববীতে মাথার নিচে কাপড় দিয়ে শুয়ে পড়তেন। তাঁর বহু দাস-দাসী থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজের কাজ নিজেই করতেন। কোনো ঘুমন্ত দাসীকে তিনি কখনো ডাকতেন না । প্রতি সপ্তাহে তিনি একটি করে গোলাম আযাদ করতেন।

হযরত ওসমান ছিলেন অত্যন্ত নরম স্বভাবের। খলিফা-পদে অধিষ্ঠিত হয়েও কারো সাথে কঠোর ব্যবহার করেননি। একদিন তিনি খুতবা পাঠ করছিলেন, এমন সময় এক ব্যক্তি বাধা দিয়ে বলল, ওসমান, তাওবা কর এবং সীমালঙ্ঘন করা থেকে বিরত হও। হযরত ওসমান রা. তৎক্ষণাৎ কেবলামুখী হয়ে বললেন, হে আল্লাহ, আমি তাওবা করলাম এবং তোমারই মুখাপেক্ষী হলাম।”

চলবে………….